যশোরে পায়েল হিজড়ার সপরিবারে মানবেতর জীবন যাপন


মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর
প্রকাশের সময় : আগস্ট ৬, ২০২২, ৫:৩৭ অপরাহ্ণ / ১০৭
যশোরে পায়েল হিজড়ার সপরিবারে মানবেতর জীবন যাপন

যশোরে পায়েল হিজড়ার সপরিবারে মানবেতর জীবন যাপন। দীর্ঘ ৩০ বছর দখলে থাকার পরেও প্রভাবশালীরা পায়েল হিজড়াকে অপকৌশলে সপরিবারে উচ্ছেদ করেছে। ঘটনাটি যশোর শহরের মুজিব সড়ক ষষ্টীতলা পাড়ার। পায়েল হিজড়া বর্তমানে বৃদ্ধা মাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তিনি জমি নতুন করে বরাদ্দের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বরাবর আবেদন করেও কোন লাভ হচ্ছেনা। এখন পথে পথে ঘুরছেন এক টুকরো বসতঘরের জন্য।

জানা গেছে, খোরশেদ মিস্ত্রীর পুত্র হালিম রেজা পায়েল হিজড়া কে বলে আমি ঘর বাড়ি নির্মান করবো। চাচাতো ভাইয়ের এই কথায় সে ঘরদোর ছেড়ে দিতেই সেখানে পাকা বাড়ি নির্মাণ করে হালিম রেজা দখল করে নেয়। তাদের একটি ঘর ভাড়াও করে দেয় হালিম। সেখানে পায়েল ও তার পরিবারের সদস্যদের উঠিয়ে দিয়ে ২/১ মাস ভাড়া দিয়ে তারপর ভাড়া বন্ধ করে দেয়। এমনকি তাদের জমিতেও ফিরতে বাঁধা দেয়।

ফলে স্বর্বসান্ত ও বসতবাড়ি হীণ হয়ে যায় পায়েল হিজড়ার পরিবারের সদস্যরা। একই সাথে যাতে সেই জমিতে আর বসবাস না করতে পারে সেজন্য চারিদিক ঘিরে ফেলে। ৭৭নং চাঁচড়া মৌজার ৭০১ খতিয়ানের ৯১,৯৫ ও ৯৭ নম্বর দাগে খাস জমিতে তিনটি পক্ষকে নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এস এম মিকাইল ইসলাম বসাবসি করেন চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি। এই তিন পক্ষ হচ্ছে আব্দুর রশিদের কন্যা পায়েল হিজড়া, খোরশেদ মিস্ত্রীর পুত্র হালিম ও এম শামছুর রহমানের ওয়ারেশগন।

এসি ল্যান্ড অফিসে বসাবসির পর সিদ্ধান্ত হয় জমিটিতে বসবাসে পায়েলের অগ্রাধিকার। সে পাঁচশতক জমিতে বসবাস করবে। হালিম গং তা না মেনে জমিটি নিজ দখলে রেখেছে। তিনি কোনভাবেই জমিটি হাতছাড়া করতে চাননা। তিনি জমি জবর দখলে রাখার পাশাপাশি প্রভাবশালীদের দিয়ে পায়েল হিজড়া কে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। তিন তলা প্ল্যানে বাড়ি করেছে জবর দখলকারী হালিম গং। সামনে তিনটি ঘর করে ভাড়া দিয়েছেন এই হালিম।

যশোর জেলা প্রশাসনের এসি ল্যান্ড বিষয়টি তদন্ত করে ২২ জুন বসাবসি করেন সকল পক্ষ কে নিয়ে। তিনি সিদ্ধান্ত দেন দুই পক্ষ আধাআধি ভাগাভাগি করে বসবাস করবে। কিন্ত বাস্তবে হালিম রেজা তা করেনি। তিনি কোন আইন নিয়ম না মেনে জমিটি নিজ দখলে রেখে ভোগ করছেন। এমনকি স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী আলমগীর কবির সুমনের কথাও মানছেনা এই হালিম গং। হালিম রেজা বলছেন তিনি ও তার পিতা জমিটি ক্রয় করেছেন। তবে এই ক্রয়ের ক্ষেত্রে তারা কোন কাগজপত্র বা দলিলাদি দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রতিবার বলেন পরবর্তী ২/৩ দিনের মধ্যে জমি ক্রয়ের কাগজ পত্র দেখাবেন। কিন্ত সেই ২/৩দিন আর কখনো আসেনা। আসবে কি করে জমি ক্রয়ের বিষয়টি একটি চরম ভাওতাবাজি বৈ কিছু নয়। তাছাড়া সরকারি জমি কিভাবে ক্রয় করবেন তাও কারো বোধগম্য হচ্ছেনা।

পায়েল হিজড়া জানান, হালিম রেজা অপকৌশলে তাদের বসবাসের একমাত্র অবলম্বন জমিটি জবর দখলে নিয়ে এখন ফেরত দিতে টালবাহানা করছে। তাদের এই জবর দখলের অপচেষ্টা দীর্ঘদিনের। আপন চাচাতো ভাই হওয়া সত্ত্বেও সে একটি পাষন্ড প্রকৃতির লোক। তার মায়া দয়া কিছুই নেই। সে একজন ঠগ জোচ্চোর ও চিহ্নিত ভূমিদস্যু। সে কোন আইন মানেনা। অসামাজিক মানুষ। সে এলাকার মোড়ল মাতব্বরদের মোটে মানেনা। এমনকি তার পরিবারের লোকজনও হালিমের ভয়ে কথা বলেনা। তারা একজোট হয়েই পায়েল হিজড়াদের বসবাসের সরকারি জমি নিজেদের ক্রয় সম্পত্তি বলে চালিয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন: মিঠাপুকুরে পানের দোকানের আড়ালে রমরমা ফেনসিডিল ব্যবসা

হালিম যশোর শহরে পরিচিত মুখ। এটাকে ব্যবহার করে সে মানুষজনকে ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে তাদের বসবাসের জমি জবর দখলে নিয়ে দিব্যি সুখে দিন কাটাচ্ছে। পায়েল হিজড়া মানবিক কারনে এখন সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে উচ্চ মহলে অভিযোগ করার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। তিনি বৃদ্ধা মা সাজেদা বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অতি মানবেতর জীবন যাপন অবসানে তা করবেন।

Spread the love
Link Copied !!