যশোর মণিহার সিনেমা হলে ‘হাওয়া’র দূর্দান্ত শো


মালিকুজ্জামান কাকা, যশোর
প্রকাশের সময় : আগস্ট ৭, ২০২২, ৩:১০ অপরাহ্ণ / ৬০
যশোর মণিহার সিনেমা হলে ‘হাওয়া’র দূর্দান্ত  শো

ইতিবাচক সাফল্যে মেজবাউর রহমান সুমনের ছায়াছবি অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর ‘হাওয়া’। এখনো হাউসফুল ব্যবসা করছে ছবিটি। যশোরের মণিহার প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি হাউসফুল।

গত শুক্রবার থেকে ছবিটি দেশের ঐতিহ্যবাহী এ প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হচ্ছে। ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি এখনো দর্শকদের পছন্দের শীর্ষে।
গানটি নিয়ে সারা দেশের শ্রোতাদের উন্মাদনা যেন থামছেই না। সেই গানের গীতিকার হাশিম মাহমুদকে প্রতিদিনই কোনো না কোনো
গণমাধ্যমের সামনে আসতে হচ্ছে। সাংবাদিকের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

মণিহার প্রেক্ষাগৃহের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউল ইসলাম জানান, প্রতিদিন চারটি করে শো হয়। এর মধ্যে শুক্রবার দুটি শো হাউসফুল হয়েছে। যা গেল পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম আবারও দেখা গেল।

যশোরের মণিহারে ‘হাওয়া’র রেকর্ড সম্পর্কে তিনি আরো জানান, মণিহার প্রেক্ষাগৃহে রয়েছে ১৪০০টি আসন। এর মধ্যে ওপরতলায় ৫৫১ আসন আর নিচে ৮৫০ আসন। প্রতিদিন স্পেশাল, ম্যাটিনি, ইভিনিং ও নাইট মিলিয়ে চারটি প্রদর্শিত শো হয়। ‘সব শোতে একই রকম দর্শক হয় না। আমাদের তো আসলে অনেক বড় হাউস, সিনেপ্লেক্স গুলোতে তো ২০০ থেকে ২৫০ কখনো ৩০০। তাই এ ধরনের ছবি দিয়ে সব আসন পূর্ণ করা সম্ভব। দর্শকদের আবার হলমুখী দেখে আমরা খুবই খুশী। মন্দার এ বাজারে প্রথম দিন শুক্রবারে আমরা দুই লাখ টাকার ওপরে টিকিট বিক্রি করেছি।’

প্রেক্ষাগৃহ সুত্রে জানা যায়, মণিহার প্রেক্ষাগৃহে ওপরতলার আসনের টিকিট মূল্য ১০০ টাকা আর নিচে ৮০ টাকা। যশোরের মণিহারে ‘হাওয়া’র রেকর্ড‘হাওয়া’ ছবিটি দেখতে কোন ধরনের দর্শকেরা আসছেন, এ সম্পর্কে জিয়াউল ইসলাম জানান, ‘সকালের দিকে যাঁরা আসেন, বেশির ভাগ স্টুডেন্ট ও ইয়াং ছেলেমেয়ে। সন্ধ্যার দিকে একটু বয়স্ক মানুষ আসেন। ‘হাওয়া’ টাইপ ছবি মুক্তি দিলেই এ ধরনের দর্শকেরা দেখতে আসেন। ‘হাওয়া’ টাইপ মানে ‘মনপুরা’, ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ও ‘স্বপ্নজাল’ টাইপের ছবি।’ মণিহার প্রেক্ষাগৃহ গেল ঈদে চালিয়েছে ‘দিন দ্য ডে’ ছবিটি। এরপর তারা মুক্তি দেয় ‘পরাণ’। ছবিটি দুই সপ্তাহ চলে। এরপর মুক্তি পায় ‘হাওয়া’। এর মধ্যে ‘দিন দ্য ডে’ ছবির ব্যবসা খারাপ গেছে। এর থেকে ‘পরাণ’ ভালো ছিল। তবে কোনো শো হাউসফুল পাইনি। এখন যে ‘হাওয়া’ চালাচ্ছি, এর সাড়া ব্যাপক।

যেভাবে দর্শক আসছে, তাদের দেখে ভালো লাগছে।’ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছে, ‘গতকাল যশোরের মণিহার সিনেমা হলে “হাওয়া’ সিনেমার সেল হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৪০০ টাকা, যা ২০১৭ সালে ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বস-২’ সিনেমার পরে সর্বোচ্চ সেল।

চলচ্চিত্র নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন জানান, ‘হাওয়া’ হচ্ছে এ কালের রূপকথার গল্প। যে রূপকথার প্রধান উপাদান সমুদ্র, ঢেউ আর একটি ট্রলার। আবহমান কাল ধরে চলে আসা যে রূপকথা আমরা শুনে এসেছি সেই রূপকথা ’হাওয়া’ নয়, তবে এই চলচ্চিত্রে রূপকথা স্বয়ং নিজে এসে আধুনিক রূপে হাজির হয়। এই সময়ের যে অস্থিরতা, তা থেকে বেরিয়ে এসে এক ধরনের ধ্যানমগ্ন নির্মল যাত্রার নাম ‘হাওয়া’। এটি মাটির গল্প নয় বরং পানির গল্প, সমুদ্রের গল্প। সমুদ্র এমন এক বিশালতার নাম যার পাড়ে বসে আমরা সাধারণ মানুষ এর সৌন্দর্য দেখি, রোমান্টিসিজমে ভুগি। কিন্তু গভীর সমুদ্রের গল্প জানতে পারিনা। এর পাড়ের মানুষগুলোর গল্প জানলেও জানিনা সমুদ্রে চলাচলরত মানুষগুলোর ভেতরের গল্প। সেখান থেকে ফেরার গল্প হয়তো জানি, কিন্তু, না ফেরার গল্প আমরা ক’টা জানি? এই না জানা মৌলিক গল্পটিই আমি আমার এই সিনেমার মাধ্যমে জানাতে চাই। দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রটির প্রস্তুতি পর্ব চলেছে। চলচ্চিত্রটির কেন্দ্রিয় চরিত্রে চঞ্চল চৌধুরী, নাজিফা তুষি, শরিফুল রাজের নাম। কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন এলাকায় শুটিং হয়।

প্রতিক্রিয়ায় চঞ্চল চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি হাওয়া সিনেমা দিয়ে দর্শকদের এত কাছে যেতে পারব। দর্শকদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার, হলে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে না, প্রায় এক সপ্তাহের অগ্রিম টিকেট সোল্ড আউট হয়ে গেছে। এটা স্বপের মত মনে হচ্ছে। এত দর্শক, তাদের যে উৎসাহ উদ্দীপনা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

আরও পড়ুনঃ মুজিবকে মুচলেকা দিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ না দেয়ার র্বাতা পাঠিয়েছিলেন বঙ্গমাতা

বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে মন্তব্য করে এ অভিনেতা বলেন, দেশে সিনেমার যখন মহাসংকট, হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,
হলে দর্শক আসছে না, সেই সময়ে গত কয়েকটা ছবি থেকে শুরু করে আজকে যে হাওয়া মুক্তি পেল, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলা সিনেমা এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের আপাময় দর্শক ও সিনেমাপ্রেমীদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সিনেমার ট্রেলার ও গান শুনে তারা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন, ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, এর চাইতে আর আনন্দ আমাদের জন্য কিছু হতে পারে না।’

অভিনেত্রী নাজিফা তুষি বলেন, ‘মানুষের এত ভালোবাসা ও আগ্রহ, সত্যিই আমরা অভিভূত। আসলে দর্শকরা আমাদের সিনেমাটা প্রমোশন করেছেন। আপনাদের এই অনুপ্রেরণা ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করতে আমাদের উৎসাহ জোগাবে।’

Spread the love
Link Copied !!